যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ন্যাটো থেকে বের হয়ে যায় তবে ন্যাটো কি ন্যাটো থাকবে এমন প্রশ্ন কূটনীতিকদের সামনে এসেছে।
ট্রাম্প জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এসে মিত্র দেশ সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে মনে হয় না ন্যাটোর ভবিষ্যৎ আর খুব বেশি দূর এগোবে। জামার্নির তীব্র সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, জার্মানিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়া। গ্যাস চুক্তির মাধ্যমে জার্মানি রাশিয়াকে শত শত কোটি ডলার দিচ্ছে, অথচ ন্যাটোর সদস্য হিসেবে প্রতিরক্ষা খাতে জার্মানির যা খরচ করার কথা, তার অর্ধেকও তারা করেনি।
মিত্রদের সঙ্গে ট্রাম্পের এমন ফারাক বাড়তে থাকলে ন্যাটো টিকবে না বলেই কূটনৈতিকরা ভাবছেন। বিবিসির বিশ্লেষণে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
ন্যাটো জোট কিসের জন্য?
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের যে কোন ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্যই ন্যাটো জোট গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধ থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ন্যাটোর উদ্দেশ্যও কিছুটা বদলে যায়। ইউরোপে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হলো নতুন অনেক দেশকে। অন্য অনেক দেশের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা হলো।
তবে ন্যাটোকে কেবলমাত্র একটি সামরিক প্রতিরক্ষা জোট ভাবলে ভুল করা হবে। এটি আসলে তার চেয়ে বেশি কিছু। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো বাকী বিশ্বকে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে, ন্যাটো ছিল তাঁর মধ্যে অন্যতম। আটলান্টিকের দু্ই তীরের দেশগুলোর মূল্যবোধ এবং ঐক্যের প্রতীক আসলে এটি।
আটলান্টিকের বন্ধন কি ছিন্ন হতে চলেছে?
বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, ন্যাটোতে কোন দেশ কি পরিমাণ অর্থ দেয় তা নিয়ে ট্রাম্পের সাথে বিভিন্ন সদস্য দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। ন্যাটোর ব্যয়ভার নিয়েও বহুদিন ধরে তর্ক চলছে, আসলে কে কতোটা বহন করবে। যদিও ট্রাম্পই প্রথম প্রশ্ন তুলছেন, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে যে কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিষয়টির সমাধান করতে চাইছেন, সেটা একেবারেই নতুন।
নেটোর সদস্য দেশগুলো একমত হয়েছিল যে, ২০২৪ সাল নাগাদ প্রত্যেক দেশ তাদের জিডিপির মোট দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করবে। তবে অনেকে তাদের ব্যয় বাড়িয়েছে, আবার অনেকে তাদের টার্গেট থেকে বেশ পেছনে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিতে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে জার্মানি।
এ মাসের শুরুতে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলকে উদ্দেশ্য করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি জানিনা জার্মানিকে সুরক্ষা দিয়ে আমেরিকা নিজে কতটা সুরক্ষা পায়।’ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই যখন ন্যাটো জোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন তা ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
কিন্তু রাশিয়া আসলে কত বড় হুমকি?
রাশিয়ার পুনরুত্থান থেকে শুরু করে সাইবার যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ থেকে ব্যাপক অভিবাসন ইত্যাদি নানা ধরণের হুমকির মুখে ন্যাটো। এমনকি রাশিয়ার হুমকিও একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির।
রাশিয়া আসেলে পুরনো আমলের সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়। এখন পশ্চিমা দেশগুলো স্পষ্টভাবে বিশ্বাস করে, রাশিয়া দরকার হলে কাউকে হত্যার জন্য আততায়ী পর্যন্ত পাঠাতে পারে। জর্জিয়া এবং ইউক্রেনে গত কয়েক বছরে যা ঘটেছে, সেটা অন্তত তাই বলে।
নতুন নতুন দেশকে সদস্য করার মাধ্যমে ন্যাটো যে তাঁর সীমানা বাড়াচ্ছে, সেটা তো অবশ্যই রাশিয়াকে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
ট্রাম্পের আমলে ন্যাটো কি টিকবে?
সবকিছুতেই ট্রাম্প যে মুখের ওপর কথা বলেন তা বিশ্বরাজনীতিতে একেবারেই নতুন। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এমন এক পরাশক্তি, দুনিয়ায় জুড়ে যাদের বিভিন্ন ধরনের কৌশলগত স্বার্থ আছে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়ায়ে ন্যাটো জোট যে টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে, তাতে রীতিমত হাল ছেড়ে দিয়েছেন জোটের কূটনীতিকরা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন, তখন কি হবে তা নিয়ে ধোয়াশার মধ্যে আছেন অনেকেই।
কূটনীতিকদের আশঙ্কা, ন্যাটো জোট তখন হয়তো একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে এবং আটলান্টিকের দুই তীরের মৈত্রী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।